এই পোস্টটি 212 বার দেখা হয়েছে

বর্তমান সময়ের ছোট ছোট শিশুদের মানসিক অবস্থা গড়ে উঠে বিভিন্ন অপরিপক্ক পরিবেশে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মনগত রাজ্যে কার্টুনের রাজত্বই বেশি থাকে এবং তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। অথচ শিশুর মেধা ও মননের সঠিক বিকাশ সাধন হয়ে থাকে সঠিক মনস্তাত্বিক চিন্তা-ভাবনা থেকেই। মা-বাবারা এখন অধিক চিন্তিত তাদের ছেলেমেয়েদের চঞ্চল ও অস্বাভাবিক মনোবৃত্তির জন্য এবং সেই শিশুর ভবিষ্যতের জন্য । শিশুর এসব অস্বাভাবিক প্রকৃতি বা আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বৈদিক শাস্ত্রে বিগ্রহ অৰ্চনা বা পূজাকেই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছ। বিগ্রহ পূজা বা অৰ্চনা ধর্মের একটি প্রধান অঙ্গ । জৈব ধর্ম নামক গ্রন্থে ভকতিবিনোদ ঠাকুর লিখেছেন, “ধর্ম যেখানে বিগ্রহ পূজা-অর্চনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় সেই ধর্মের ছেলে মায়েরাও জন্মের পর থেকে বিপদের সম্মুখীন হন।” শ্রীল প্রভুপাদ ও সমস্ত গৃহস্থদের বিগ্রহ অর্চনা বা পুজা করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন । গৃহস্থরা যারা বাড়িতে বিগ্রহ পুজা করে তারা যেন তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য এমন একটি পরিবেশের সৃষ্টি করেন যেই পরিবেশে তারা ব্যবহারিক শিক্ষা লাভ করে কিভাবে কৃষ্ণকে ভালবাসতে হয়। গৃহস্থরা তাদের ছেলেমেয়েদের শেখাতে পারে কিভাবে প্রণাম, জপ, নৃত্য এবং মন্দির মার্জন, ফুলের মালা গাঁথা, বিগ্রহকে সাজানো ইত্যাদি করতে হয়। শুরুর দিকে তাদেরকে শেখানো যেতে পারে কোন কিছু ব্যবহারের পূর্বে বিগ্রহকে নিবেদন করতে হয় যেমন খাবার এবং নতুন কাপড় চোপড় এবং তাদের চিত্র অঙ্কনের প্রতিভা কৃষ্ণের ছবি আঁকানোর মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এভাবে একটি শিশু ভগবানের প্রতি তার সহজাত আকর্ষনে উন্নতি সাধন করতে পারে । ছোট ছেলেমেয়েদের খেলার মনোভাব রয়েছেই এবং তাই অন্যান্য আজেবাজে খেলা করার চেয়ে তারা কৃষ্ণের সাথে খেলতে পারে, কৃষ্ণের বিগ্রহকে সাজানোর মাধ্যমে, খাওয়ানোর মাধ্যমে এবং তাকে পূজা করার মাধ্যমে । যখন তারা যুবক হবে তারা কৃষ্ণের পুতুলের সাথে খেলনা করা সহ এবং তাকে পূজা করতে পারে এবং পরবর্তীতে তারা যখন আরও বড় হবে তখন তারা তাদের মা-বাবাকে বিগ্রহ পুজা- অর্চনায় সাহায্য করতে পারে। এক চিঠিতে শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছিলেন “শিশুদের খেলা করার মনোভাবের সুবিধা নিয়ে তাদেরকে দিক নির্দেশনা দেওয়া উচিত এবং তাদেরকে রাখাল বালক, গাভী, ময়ূর ইত্যাদি হওয়ার মাধ্যমে কৃষ্ণ গেইম খেলার শিক্ষা দেওয়া উচিত। শুধুমাত্র এভাবে যদি তারা খেলার মাধ্যমে সবসময় কৃষ্ণ চিন্তা করে তারা সত্যিকার অর্থেই কৃষ্ণের সাহচর্য থাকেন। তখন তারা খুব তাড়াতাড়ি কৃষ্ণভাবনাময় হবেন। উপরন্তু সামান্য ABC শেখানো, প্রসাদ গ্রহন, কৃষ্ণ গেইম অধিকভাবে খেলা, কিছু কীর্তন, আবার সামান্য ABC শেখানো এভাবেই। এরূপে তাদের মন এবং শরীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখা উচিত কেননা ছোট ছেলেমেয়েরা হল প্রকৃতিগতভাবেই বিশ্রামহীন তাই তারা প্রায়ই পরিবর্তন চাইবে।” প্রভুপাদ তার নিজের একটি উদাহরণ দেন যখন তিনি কলকাতায় তার মা-বাবার সাথে শৈশবে কাটিয়েছিলেন। “ছোট ছেলেমেয়েরা সাধারণত অনুকরণ করে। তারা তাদের মা-বাবার অভ্যাস এবং কাজকর্ম অনুকরণ করে। তাই সৌভাগ্যবশত আমাদের সুযোগ হয়েছিল এমন একটি পিতা পাওয়ায়। তাই আমরা আমাদের পিতাকে অনুকরণ করেছি। আমার শৈশবে, আমি আমার পিতাকে অনুকরণ করতাম। তিনি কৃষ্ণ বিগ্রহ পূজা করছিল। তাই আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম “আমার প্রিয় পিতা, আমি পূজা করব। আমাকে কৃষ্ণের বিগ্রহ দিন” তাই তিনি আমাকে রাধাকৃষ্ণের একটি ছোট বিগ্ৰহ দিয়েছিলেন এবং আমি তাকে অনুকরণ করেছিলাম। তাই জীবনের শুরুতেই……….তাই এগুলোই হল সত্যিকার ব্যাপার। মহারাজ পরীক্ষিতও কৃষ্ণের সাথে কৃষ্ণের পুতুলের সাথে খেলেছিলেন মিরাবাঈয়ের মত। মিরাবাঈ কৃষ্ণের পুতুলের সঙ্গে খেলেছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি একজন ঊর্ধ্ব মার্গের ভক্ত হয়েছিলেন। তাই এই সুযোগ-সুবিধাগুলো এখানে রয়েছে।” প্রভুপাদ শ্রীমদ্ভাগবতের ২.৩.১৬ এর তাৎপর্যে উদ্বব মহারাজ সম্পর্কে লেখেন “তারা জন্মের পর থেকেই উদ্বব স্বভাবতই ভগবান কৃষ্ণের ভক্ত ছিলেন। অথবা একজন নিত্যসিদ্ধ বা মুক্তাত্মা ছিলেন। এমনকি তার শৈশবেই তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তিতে তিনি ভগবান কৃষ্ণের সেবা করতেন।তিনি কৃষ্ণের পুতুলের সঙ্গে খেলতেন, পুতুলগুলোকে সুসজ্জিত করতেন। তাদেরকে খাওয়াতেন এবং পূজা করতেন। আর এভাবেই তিনি অপ্রাকৃত উপলব্ধিতে নিমগ্ন থাকতেন। এগুলো একজন শাশ্বত মুক্তাত্মার নিদর্শন এভাবেই ছোট শিশুদের মনোগত চঞ্চলতা হ্রাস পাবে এবং প্রকৃতই ধৈর্যশীল হয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপে মেধা ও মননের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে। কেননা কৃষ্ণভাবনার শক্তিতে সমস্ত গুণাবলী তাদের মধ্যে ফুটে উঠবে এবং অবশ্যই কৃষ্ণ তাদের সাহচর্য অবলম্বন করে সুরক্ষা প্রদান করবে। তাদের বর্তমান সমাজের সকল মাতা-পিতাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করে বলা হচ্ছে বেশী বেশীই বই জোড় করে মুখস্থ করানোর চেয়ে কিংবা তাদের কোমল শরীরে মারের উপর মার এ ধরনের নির্যাতন না চালিয়ে শিশুর মূল মানসিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন। আর এর প্রকৃত সমাধান হল কৃষ্ণভাবনামৃত। এই কৃষ্ণভাবনামৃত পালনের কলে আপনার সন্তানতো উপকৃত হবেই সঙ্গে আপনিও মানসিক যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পাবেন। সুতরাং এই কৃষ্ণভাবনামৃতের একটি অংশ বিগ্রহ অর্চনা বা পূজা করার প্রতি আপনার সন্তানকে অতিসত্ত্বর নিয়োজিত করুন।
হরে কৃষ্ণ ।
চৈতন্য সন্দেশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.differentcoder.csbtg
Hare Krishna Thanks For Reading