অহোভিলাম ভক্ত রক্ষক ভগবান নৃসিংহদেবের লীলাময় স্থান

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২২ | ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২২ | ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 244 বার দেখা হয়েছে

অহোভিলাম ভক্ত রক্ষক ভগবান নৃসিংহদেবের লীলাময় স্থান

Pin on OM NAMO NARASHIMAপরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার ভগবান শ্রী নৃসিংহদের যার শরীর অর্ধেকটা মানুষ এবং অর্ধেকটা সিংহের মত, তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকলের কাছে সুপরিচিত। বৈষ্ণবেরা বিপদে নৃসিংহদেবকে স্মরণ করেন কেননা তিনি ভক্ত প্রহ্লাদকে তার অত্যাচারী পিতা দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর কাছ থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই নৃসিংহদেবের আরেক নাম ভক্তরক্ষক ভগবান শ্রী নৃসিংহদেব।

অহোভিলাম

কিন্তু আমরা ভগবান নৃসিংহদেব সম্পর্কে কতটাই বা অবগত ? বৈষ্ণবদের পূজ্যনীয় গ্রন্থ পঞ্চরাত্র আগমাতে ভগবান নৃসিংহদেবের প্রায় ৭০টিরও বেশি রুপের বর্ণনা আছে। ইস্কনের এক যুবক ভক্ত যিনি ছোটবেলায় নৃসিংহদেবের পূজা করতে করতে বেড়ে উঠেছেন এবং তার জীবনের গত দশটি বছর কেটেছে নৃসিংহদেব ও তার বিভিন্ন আকৃতি নিয়ে গবেষণা করার মাধ্যমে। সেই দাস প্রভু বলেন যখন ভগবান নৃসিংহদেব হিরণ্যকশিপুর প্রাসাদের একটি স্তম্ভ থেকে গোধূলী লগ্নে বেড়িয়ে এলেন তখন তিনি দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুকে মারতে উদ্যত হলেন এবং তার সে রূপ এতই ভয়ানক ছিল যে দেখে মনে হচ্ছিল যেন এ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডকে নিমিষের মধ্যে ধ্বংস করতে প্রস্তুত। তার এই রূপটি স্থানু-নৃসিংহদেব নামে পরিচিত এবং তিনি প্রহ্লাদ এবং হিরণ্যকশিপুর দিকে পৃথক পৃথক দৃষ্টিতে তাকালেন। স্থানু-নৃসিংহদেবের অর্ধেক দৃষ্টি হিরণ্যকশিপুর দিকে ভয়ানক ক্রোধের সহিত নিক্ষেপ হচ্ছিল এবং বাকি অর্ধেক দৃষ্টি ভক্ত প্রহ্লাদের প্রতি স্নেহাবিষ্ট হয়ে ভালোবাসায় সিক্ত ছিল। যখন নৃসিংহদেব হিরণ্যকশিপুর সাথে ভয়ংকর ক্রোধের সহিত যুদ্ধে রত ছিলেন তখন তাঁর সেই রূপের নাম ছিল জোয়ালা বা আগুন। পরবর্তীতে তাঁর সেইরূপ ‘ভীর’ নামক রূপে পরিবর্তন হয়েছিল। যখন তিনি দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুকে বলপূর্বক জোর করে টেনে নিয়ে কোলের উপর রেখে তার বক্ষ হাতের নখ দিয়ে বিদীর্ণ করেছিলেন তখন তার নাম ছিল উগ্র নৃসিংহদেব এবং এ-রূপটি ভক্তদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। ঐ অবস্থায় ভগবান নৃসিংহদেব এতটাই ভয়ানক ছিলেন যে তাঁর সহধর্মিনী লক্ষ্মী দেবীও ভয়ে তার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। আতঙ্কিত অবস্থায় লক্ষ্মী দেবী প্রহ্লাদের কাছে গিয়ে বললেন “আমি কখনো আমার প্রভুকে এরকম ভয়ানক মূর্তিতে দেখিনি। একমাত্র তুমিই পার আমার প্রভুকে শান্ত করতে, তাই তুমি তার কাছে যাও”। প্রহ্লাদের প্রার্থনায় নৃসিংহদের অবশেষে শান্ত হলে লক্ষ্মীদেবী পুনরায় নৃসিংহদেবের কাছে ফিরে গিয়েছিলেন। এজন্যে বলা হয়েছে যে, গৃহস্থ ভক্তদের উগ্র নৃসিংহদেবের পূজা করা উচিত নয়, কেননা তখন উগ্র নৃসিংহদেবের পাশে তার সহধর্মিনী ছিলেন না কিন্তু গৃহস্থদের স্ত্রী বা সহধর্মিনী রয়েছে। গৃহস্থদের সেজন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে লক্ষী-নৃসিংহদেবের পূজা করার জন্য কেননা লক্ষ্মী-নৃসিংহদেবের পূজা করলে গৃহস্থ জীবনে শান্তি বিরাজ করে। ভারতে ৩০০টিরও বেশি মন্দিরে ভগবান নৃসিংহদেব বিভিন্নরূপে পূজিত হচ্ছেন। ভক্তদের জন্য অহোভিলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান কেননা এই স্থানেই ভগবান নৃসিংহদেব হিরণ্যকশিপুকে বধ করেছিলেন। এটি উত্তর ভারতের অন্ধপ্রদেশে অবস্থিত। ইস্কনের অন্যতম আচার্য ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বামী মহরাজ প্রথমবারের মত ১৯৭৯ সালে কয়েকজন উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে একটি পারমার্থিক অভিযান চালিয়েছিলন এই অহোভিলাম নামক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এই পারমার্থিক অভিযানে নৃসিংহদেবের লীলাস্থলের অনেককিছুই আবিষ্কৃত হয়েছিল যা অভিযাত্রী ভক্তদের খুবই আনন্দ দান করেছিল। ১৯৯৮ সালের দিকে বর্তমান ইস্কনের বার্তা ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেন্দ্র দাস প্রভু কয়েকজন ভক্তসহ পুনরায় ঐ স্থান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। অহোভিলামে নৃসিংহদেবের বিভি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। তারা অহোভিলাম স্থানটির ৫ কি.মি. এর মধ্যে প্রায় নয়টি নৃসিংহদেবের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ লীলাময় পবিত্র স্থান আবিস্কার করেছিলেন। একেন্দ্র প্রভু বলেন, আমরা যখন একটি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ভ্রমণ করছিলাম তখন আমি ‘নৃসিংহ-মালা-স্তোত্র’ নামক একটি বই থেকে নৃসিংহ দেবের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করছিলাম যাতে তিনি আমাদেরকে এ ভয়ানক গভীর জঙ্গলে রক্ষা করেন। হঠাৎ তখন আমি দেখলাম কিছু বিষাক্ত গোখরা সাপ আমাদের পথের উপর বসে আছে। কিন্তু আমি অত্যন্ত আশ্বান্বিত হলাম যে তারা আমাদের কোন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। আমরা মায়ের কোলে একটি নিরাপদ শিশুর মতই নির্বিঘ্নেই ঐ স্থান অতিক্রম করলাম। আমি তখন বুঝলাম যে ভগবান নৃসিংহদেব সত্যিই তার ভক্তদের রক্ষা করেন এবং এটা করে তিনি খুবই আনন্দ পান,” তারা ঐ পবিত্র স্থানে অবস্থিত “প্রহলাদ ভরদম’ মন্দিরে কিছু প্রাচীন মূর্তি দেখতে যান। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে এই যাত্রায় একটি স্তম্ভ আবিস্কার করেন যেখান থেকে নৃসিংহদের বেরিয়ে এসেছিলেন। চৈতন্য চরিতামৃতে উল্লেখ রয়েছে যে, ভগবান চৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ং এ পবিত্র স্থান অহোভিলাম পরিদর্শন করেছিলেন। এই স্থান বৃন্দাবনের মতই পবিত্র


চৈতন্য সন্দেশ জুন ২০০৮ প্রকাশিত

 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।