এই পোস্টটি 67 বার দেখা হয়েছে
অভ্যাস যখন খারাপ অভ্যাস হয়ে থাকে তখন তা ত্যাগ করা কঠিন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে খারাপ অভ্যাসের চেয়ে ভালো অভ্যাসগুলো ত্যাগ করাই সহজ মনে হয়। এটি হল এই জগতের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। অনেক সময় মনে হয় একটু নিজেকে জড়িয়ে দেখি না। এই প্রকার মনোভাব আমাদেরকে ঐ সব খারাপ অভ্যাসগুলোর প্রতি আসক্ত করতে পারে। ধুমপান, অবৈধ যৌন সঙ্গ, নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ কিংবা অন্যান্য খারাপ জিনিসের ফলাফলের প্রতি যদিও অনেকেই অবগত, কিন্তু খামখেয়ালীবশত একবার, দু’বার কিংবা বারবার চেষ্টা করার ফলে এক পর্যায়ে তা খারাপ অভ্যাসে রূপ নেয়। তখন এ থেকে বেরিয়ে আসাটা অনেক কষ্টকর। কোন একটি জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লে তা অভ্যাসে পর্যবসিত হয়। এক্ষেত্রে মনের ভূমিকাটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ সমস্যা নিয়ে ৫০০০ বছর পূর্বে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, ‘আমি চাই না পাপকর্ম করতে কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও কে যেন আমাকে পাপ কর্ম করতে প্ররোচনা দেয়।’ (গীতা ৩.৩৬) তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উত্তর দেন রজ গুণের কারণে জগতে মানুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাপকর্ম করে। অর্থাৎ অভ্যাসের আরেকটি মূল কারণ হল রজগুন। তাই কৃষ্ণভাবনামৃতের শিক্ষার মাধ্যমে গুণের প্রভাব সম্পর্কে অবগত হয়ে জীবনকে পরিচালনা করা উচিত।
যারা খারাপ কোন অভ্যাসের প্রতি মারাত্মকভাবে আসক্ত তাদের আসক্তি থেকে বের হওয়ার জন্য সাহায্য এবং সঠিক তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে তাদের এ সমস্যার নিরসন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল পরমেশ্বর ভগবানের উপর • নির্ভরশীল হওয়া। এই আসক্তিগুলো খুবই – গভীর, আগাছার মত, যদি আগাছাকে কেটে ফেলা হয় তবে তা শীঘ্রই আবার বেড়ে উঠবে। যতই কাটবে, ততই বেড়ে উঠবে। আর যদি আমরা না কাটি তবে এটি আমাদের চেতনাকে আচ্ছাদিত করে রাখে। তাই সর্বোৎকৃষ্ট কৌশল হল আগাছার মূলকে উৎপাটন করা তখন আর অভ্যাসে দাসত্ব করতে হবে না। এমনকি ইতিহাসের বিখ্যাত মুনি ঋষিরা সাধনার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন তাদের পূর্ববর্তী অভ্যাসের কারণে। এর একমাত্র কারণ হল স্মরণাতীত কাল থেকে ভগবানের পরিবর্তে অন্যান্য কৃত্রিম কিছুর উপর আশ্রয় গ্রহণ করা। আমাদের দৃঢ়তা থাকতে হবে। আমরা আমাদের শক্তি পাই সঠিক সঙ্গের মাধ্যমে এবং মনকে সঠিক স্থানে নিয়োজিত করার মাধ্যমে। কৃষ্ণ বলেছেন, আমাদের নিজেদের নীচু স্তরের মানসিকতা জয় করতে হলে উচ্চ স্তরের সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। উত্তম সঙ্গের মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি যে কিভাবে খারাপ অভ্যাসগুলোর পরিবর্তে ভালো অভ্যাসগুলো প্রতিস্থাপন করা যায়।
যারা নিজের সন্তানদের ভালোবাসে সেসব মাতার উচিত সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। যদি সন্তান বেশ্যা এবং ড্রাগের সঙ্গ করে তখন সে সেগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। যদি সন্তান সাধুজনদের সঙ্গ করে তখন প্রতি পদক্ষেপে উন্নত গুণাবলীর প্রকাশ পাবে এবং সুখী হবে। ভক্তিযোগ হল এমন একটি বিজ্ঞান যা শেখায় কিভাবে আমাদের চেতনাকে সঙ্গের মাধ্যমে উন্নত করতে পারি।
শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছেন যে, যদি আমরা সত্যিই চাই জীবনের প্রকৃত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে, তবে অবশ্যই আমাদের হৃদয়কে পরিস্কার করতে হবে। যখন আমরা আমাদের হৃদয়কে পরিস্কার করি তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অভ্যাসগুলোর ক্ষেত্রে পরিশুদ্ধ রাখতে পারি। আবার ভালো অভ্যাসগুলোতে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে সেটি আমাদের হৃদয়কেও পরিস্কার করে। শ্রীল প্রভুপাদ যখন ৬০ এর দশকে আমেরিকায় কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের উদ্দেশ্যে পৌছেছিলেন তখন সেসময় নিউইয়র্কের লোয়ার ইস্ট সাইড এবং সানফ্রান্সিসকোর হিপিদেরকে এই ভক্তিযোগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করেছিলেন। সে সমস্ত হিপিরা মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আগত যুবসমাজ ছিল। তাদের অনেকে আবার সম্পদশালী পরিবার থেকেও এসেছিল। নেশা ও যৌন সঙ্গের প্রতি আসক্ত হয়ে ওরা নিজেদেরকে ধ্বংস করছিল এবং অসহায়ভাবে অত্যন্ত নীচুস্তরের জীবন যাপন করত। অভ্যাসের বশবর্তী স্বরূপ এসব জীবন-ধারা পরিবর্তন করতে সরকার পর্যন্ত অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়। শ্রীল প্রভুপাদ তাদেরকে কৃষ্ণভাবনামৃতের শিক্ষার মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করেন। খারাপ অভ্যাসের পরিবর্তনের এ এক অনন্য উদাহরণ। যার স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন সরকার তার প্রতি সন্তুষ্ট হন।
আরেকটি বিষয় হল, ছোট থেকেই যদি কেউ এই কৃষ্ণভাবনামৃত পালন করে তবে খারাপ অভ্যাসগুলোতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। অতএব, যারা জীবনের খারাপ অভ্যাসগুলোর জন্য বিরক্ত, অসহায় এবং হতাশ তারা অচিরেই এই কৃষ্ণভাবনামৃতের মাধ্যমে নিজের অভ্যাসগুলোর পরিবর্তন করতে পারেন। তখন অভ্যাসে অভ্যস্ত হবেন ঠিকই কিন্তু ভালো অভ্যাস।
হরে কৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, সেপ্টেম্বর – ২০১০ ইং
পর্ব – ০১ এর লিংকঃ